ওরে আমার মা-জননী
জন্মভূমি বাঙলারে
তোর মত আর পুণ্যবতী
ভাগ্যবতী বল মা কে ॥
কার চোখে মা নদীর কাজল
সবুজ তৃণের আঁচল বুকে
কার পায়ে মা ধুলোর নূপুর
সন্ধ্যা দুপুর বেজেই চলে।
রোজ ভোরে কে শিশির খোঁপায়
বকুল যুথীর গন্ধ মাখে
কার দুপুরের তন্দ্রা ভেজে
ক্লান্ত ঘুঘুর বিলাপ-জলে ॥
কামার কুমোর জেলে চাষী
বাউল মাঝি ঘর-উদাসী,
কার ছেলেরা নিত্য হাজার
মরণ-মারের দণ্ড গোনে,
ছেলের বুকের খুন ছোপানো
কোন্ জননীর আঁচল-কোণে
দুর্ভাগিনী কার মেয়েরা
কান্নাফুলের নকশা বোনে ॥
সেই মাকে যার হাজার হাজার
মা-নাম-ডাকা পাগল ছেলে
মায়ের নামে ঝাঁপিয়ে পড়ে
ভয়ঙ্করের দুর্বিপাকে।
কার ছেলে মা উপড়ে ফ্যালে
বুলেট ফাঁসির শাসন-কারা
দুখের ধূপে সুখ পুড়িয়ে
কার ছেলে মুখ উজল রাখে ॥
তুই তো সে-মা ও মা
তুই তো রে সেই গরবিনী
রক্তে-ধোওয়া সরোজিনী
যুগ-চেতনার চিত্তভূমি
নিত্যভূমি বাঙলারে ।
(অংশবিশেষ)
পুণ্যবতী - পুণ্য বা ভালো কাজ করেন এমন নারী।
সরোজিনী - সরোজ মানে পদ্ম সরোজের স্ত্রীবাচক রূপ সরোজিনী। এ কবিতায় দেশমাতৃকা বাংলাকে তুলনা করা হয়েছে কমনীয় পদ্মের সঙ্গে।
'মরণ-মারের দণ্ড' - মরণের আঘাত থেকে প্রাপ্ত শাস্তি।
ছোপানো - ছোপ মানে ছাপ, রঙ। এখানে ছোপানো মানে রাঙানো।
পাগল ছেলে - বাংলার মুক্তিকামী বিদ্রোহী ও তরুণ-যুবকেরাই 'পাগল ছেলে' যারা নির্ভয়ে যুদ্ধে-সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল।
'ভয়ঙ্করের দুর্বিপাকে' - ভীতিকর দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা। এখানে ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধকে বোঝানো হয়েছে।
শাসন-কারা - পাকিস্তানি দুঃশাসন- যা ছিল কারাগারের সমান।
উজল - উজ্জ্বল শব্দটির কোমল রূপ।
'যুগ-চেতনার চিত্তভূমি / নিত্যভূমি বাঙলারে' -যুগের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করা চিরন্তন দেশমাতৃকা বাংলাদেশ।
কবিতাটি 'বাঙলা ছাড়ো' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। উপর্যুক্ত কবিতাটিতে পুণ্যবতী ভাগ্যবতী দেশমাতার গর্বিত হয়ে ওঠার কারণ অন্বেষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জীবনের সঙ্গে পরিবেশ-প্রকৃতির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। শ্রমজীবী, কৃষিজীবী থেকে শুরু করে সব পেশাজীবী সন্তান এই মায়ের কোল জুড়ে থাকে। এই মাকে রক্ষা করার জন্য এই সন্তানরা শত কষ্ট সহ্য করে, তবে কোনো অন্যায়, অত্যাচার, অবিচারকে তাঁরা মেনে নিতে পারে না। মাকে বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনে তাঁরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতেও দ্বিধা করে না। আবার এই মাকেও সন্তানের জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখতে হয়। সন্তানকে সাহস ও শক্তি জোগাতে হয়। দেশমাতৃকাকে সকল দুঃশাসন থেকে রক্ষার জন্য মায়ের সন্তানরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাঁরা যে কোনো দুঃসময়ে জেল জুলুম ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে নিজের সুখ শান্তি ও আলস্য পরিহার করে দেশের জন্য আত্মত্যাগ করতে দ্বিধা করে না। যুগের দাবি ও সময়ের দাবি রক্ষায় যে সন্তানরা সাহসের সাথে সংগ্রামের পথ বেছে নেয়, তাঁদের জন্য বাংলাদেশ সত্যিই গর্বিত। প্রকৃতপক্ষে বাংলার মাটি এই সাহসী ও সংগ্রামী জনতার ভিত্তিভূমি।
সিকান্দার আবু জাফর বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট কবি, নাট্যকার ও সাংবাদিক। জন্মেছেন সাতক্ষীরা জেলায়। জন্মসাল ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ। পাকিস্তানি শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। 'প্রসন্ন প্রহর', 'তিমিরান্তিক', 'বাঙলা ছাড়ো' প্রভৃতি তাঁর কাব্যগ্রন্থ। 'সিরাজ-উ-দ্দৌলা' তাঁর বিখ্যাত নাটক। তিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৯৭৫ সালে।
ক. দেশপ্রেমমূলক কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন কর (দলগত কাজ)।
খ. পূর্ববর্তী কোনো শ্রেণিতে পড়া ভালোলাগা কোনো স্বদেশপ্রেমের কবিতা সম্বন্ধে তোমার অনুভূতি লিখ।
১. মায়ের আঁচল কোণে কী লেগে আছে?
ক. বকুল যুথীর গন্ধ
খ. কান্না ফুলের নকশা
গ. ছেলের বুকের খুন
ঘ. সবুজ তৃণ
২. 'গরবিনী মা-জননী' কবিতায় 'দুর্ভাগিনী মেয়ে' বলে কাদের বোঝানো হয়েছে?
ক. বাংলার অবহেলিত মেয়েদের
খ. বাংলার গ্রামীণ মেয়েদের
গ. দুর্ভাগ্য জর্জরিত মেয়েদের
ঘ. যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মেয়েদের
৩.
আমরা অপমান সইব না
ভীরুর মত ঘরের কোণে রইব না
আমরা আকাশ থেকে বজ্র হয়ে বঝারতে জানি
তোমার ভয় নেই মা
আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।
উদ্দীপকের চেতনা নিচের যে চরণে বিদ্যমান -
ক. কার ছেলেরা নিত্য হাজার মরণ-মারের দণ্ড গোনে
খ. ছেলের বুকের খুন ছোপানো কোন জননীর আঁচল কোণে
গ. মায়ের নামে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভয়ঙ্করের দুর্বিপাকে
ঘ. দুখের ধূপে সুখ পুড়িয়ে কার ছেলে মুখ উজল রাখে
৪।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
বাংলার স্বাধীনতা আনল যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
- উদ্দীপকে 'গরবিনী মা জননী' কবিতায় উল্লিখিত বাঙালি সন্তানের কোন দিকটির প্রতিফলন ঘটেছে?
ক. সংগ্রামের
খ. গর্বের
গ. প্রতিবাদের
ঘ. আত্মত্যাগের
মা দিবসে রত্নগর্ভা স্বীকৃত মায়েদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সাহেদা বেগমের বড় ছেলে সাজিদ অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন- আমাদের মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা। আমরা পিঠাপিঠি পাঁচ ভাই-বোন যখন খুব ছোটো, তখনই বাবাকে হারালাম। মাকে কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি। দুঃখ-দারিদ্র্য-অভাব আমাদের নিত্য সঙ্গী ছিল। মা সব সময় আমাদেরকে খুশি রেখে, পড়াশুনা শিখিয়ে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তোমাকে শত সালাম মা। তোমার মুখের হাসির জন্য আমরা যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।
ক. সন্ধ্যা দুপুর মার পায়ে কী বাজে?
খ. 'রক্তে ধোওয়া সরোজিনী' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. সাজিদের মাধ্যমে 'গরবিনী মা-জননী' কবিতার কোন বিশেষ দিকটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে? -ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপক ও 'গরবিনী মা-জননী' কবিতার বক্তব্য একই ধারায় প্রবাহিত।"-বিশ্লেষণ কর।